বাংলা গল্প, ‘‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’’, লিখেছেন, মৃদুল শ্রীমানী

বাংলা গল্প, ‘‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’’, লিভেছেন, মৃদুল শ্রীমানী
 
উঠ গো ভারতলক্ষ্মী
 
মৃদুল শ্রীমানী


পুলিশ? ওরে বাবা, না। পুলিশে ছুঁলে...
শাইনি আর তার মা রোজ তার বাবার হাতে মারধোর খায়। আর অকথ‍্য গালাগালি। মা ছিলেন হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়ের মেয়ে। প্রেমের টানে ভেসে পড়েছিলেন শেখ মনিরুল হকের সাথে। বিয়ের পর প্রেমিকাকে হিন্দু থেকে মুসলিম বানিয়ে নিলেন হক সাহেব। তারপর একদিন মায়ের কোল আলো করে এল শাইনি। মধ‍্য কলকাতার একটি নামী খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে শাইনি। এখন কিছু দিন হল লকডাউন পর্বে শাইনি আর তার মা রোজ তার বাবার হাতে মারধোর খায়। আর অকথ‍্য গালাগালি। ক্লাস এইটের শাইনি শুনেছে মেয়ে হলেও বাবা তার শরীরের গোপন স্থানে হাত দিতে পারে না। শরিয়তে কি লেখা আছে? হাদীসে? কোরান শরীফে? বাইবেলে?
 
শাইনি জানে না। শাইনি শুধুমাত্র জানে প্রতিটি ধর্মে মানুষকে সৎ পথে থাকতে বলা হয়েছে। ভদ্র আচরণ করতে বলা আছে। তার বাবা যে মোটেও ভদ্র আচরণ করছে না, তা শাইনি টের পাচ্ছে। 
 
মামাবাড়ি কোনো দিন যায় নি শাইনি। মামাবাড়ি র কোনো আত্মীয়ের সাথেই মায়ের আর যোগাযোগ নেই। তোমার ধর্ম বদলে গেল তো তোমার পুরোনো দিনের সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। রাণি রাসমণি র বাগানে সেই যে মন্দিরে এক সাধু থাকত, এক পরমহংস, তিনি নাকি বলতেন, যত মত তত পথ। সাধুটা নাকি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হয়েও খ্রিস্টান আবার মুসলিম দুই মতেই সাধনা করেছিলেন। সাধুটা অমন হলেও দেশ তার থেকে কিচ্ছু শেখেনি।
 
শমিতা ম‍্যাম স্কুলের শিক্ষক। কিন্তু মেয়েদের সাথে বন্ধুর মতো করে মেশে। শমিতা আন্টি যেন বন্ধু, আবার মা, আবার দিদি। শমিতা আন্টিকে সব বলা যায়। শমিতা আন্টিকে বাবার সব অত‍্যাচারের কথা বলবে ভাবল । এমনকি প‍্যান্টির মধ‍্যে বাবা কখনো কখনো হাত ঢুকিয়ে..... মেয়ে জানে এটা সেকসুয়াল অফেন্স। তুমি জন্মদাতা বাবা হলেও এটা পারো না। গুণাহ্ হয়। রাত্রি বেলা দারুখেয়ে ফিরলে বাবা ডেভিল হয়ে যায়। ইভকে ডেভিল আপেল দিয়েছিল। তারপর কী হয়েছিল, বাইবেলে অনেক বার পড়েছে শাইনি।  কিন্তু প‍্যান্টির ভিতরে হাত ঢোকানো নিয়ে কিচ্ছু বলা নেই বাইবেলে। ওটা কিন্তু খারাপ কাজ। শমিতা আন্টিকে বলব ভেবেও ওটুকু আর বলা গেল না, বুকের ভিতর দপদপ করে, ঠোঁট ফুলে ফুলে ওঠে। এসব কথা উচ্চারণ করা যায়?
 
রাণি রাসমণি রোড দিয়ে বেরিয়ে একটু হেঁটে হেঁটে গেলে তার স্কুল। ওটা পার্ক স্ট্রীট থানায় পড়ে। আর তার নিজের বাড়ি নিউ মার্কেট থানায়। কোথায় যেন শাইনি পড়েছে লকডাউনে মেয়েদের উপর পারিবারিক অত‍্যাচার বেড়েছে। থানায় গিয়ে বলবে? মা ভয় পায়। কাঁদে। বাপের বাড়ির কারো সাথেই যে সম্পর্ক নেই। ধর্ম বদলালে তো তোমার পুরোনো সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। আচ্ছা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ রে বাবা!
শাইনি ভাবে একবার কি লালবাজারে চলে যাবে? ওখানে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মঙ্গলা বিশ্বাস আছেন। ফোন নম্বরটা গুগলে আছে। 9133 2214 1953; ইমেইল dcwp@kolkatapolice.gov.in
 
স্বাধীনতা দিবস আসছে। শমিতা আন্টি বলেছেন দেশের কত মেয়ে ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন, মাতঙ্গিনী হাজরা, বীণা দাশ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তবুও এদেশের মেয়েদের স্বাধীনতা এল না কেন? তারপর শমিতা আন্টি আবৃত্তি করে, ক্ষুদিরামের মা আমার কানাইলালের মা, জননী যন্ত্রণা... তারপর গান ধরে উঠ গো ভারতলক্ষ্মী....
শাইনি জাগবে। বলবে উঠ গো ভারতলক্ষ্মী...
Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.