![]() |
দুঃখী কুকুর বৃত্তান্ত : মৃদুল শ্রীমানী |
তাহাকে দেখিয়া কুকুর বলিয়াই বোধ হয়। আমাকে দেখা মাত্র কাঁদিয়া কহিল কেঁউ।
আমি বলিলাম, কি হইয়াছে, সকাল সকাল গোলমাল করিতেছ কেন।
সে বলিল , কেঁউ, গোলমাল তো করি নাই। কাঁদিতেছি। কেঁউ।
বলিলাম, ওই হইল, তোমার কান্না আমাদের কানে গোলমাল ঠেকে। বলি, মতলবটি কি?
মতলব কিছু নাই।
তবে কেঁউ কেঁউ করিতেছ কেন। দেখিতেছ না, প্রাতর্ভ্রমণ করিতেছি। বাধা দিলে বিপদে পড়িবে।
সে বলিল, বাধা দিব আমার সাধ্য কি। দেখিতেছেন না আমার কঙ্কালসার চেহারা? মাঝে মাঝেই উল্টাইয়া পড়ি।
বলিলাম, ফিটের ব্যামো আছে বোধ হয়।
কিছু ব্যামো নাই, কেঁউ। না খাইয়া এই দশা।
তুমি জান না, খাইয়া খাইয়া আমাদের সমাজে ওবেসিটি রোগ দেখা দিয়েছে। রীতিমত মহামারী হইল বলিয়া।
সে বলিল, কেঁউ, আগে তো খাবার দেন। পরে ওবেসিটির কথা ভাবিব।
রাগিয়া বলিলাম, যাও যাও, সদুপদেশ তোমাদের কানে ঢুকে না। বলিতেছি তাবৎ বিশ্ব জুড়িয়া ওবেসিটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই কে আছিস, মার তো এটাকে একটা লাথি।
সে কাঁদিয়া কহিল কেঁউ, সকাল সকাল একবার লাথি খাইয়াছি, আর মারিলে বাঁচিব না। কেঁউ।
আবার কে মারিল। গম্ভীর স্বরে জানিতে চাহিলাম।
সে বলিল, কেঁউ, নাম বলিতে ভরসা করি না। কিন্তু কাঁকালে বড়ো লাগিয়াছে। তাই কাঁদিতেছি, কেঁউ।
বলিলাম, আবার কান্না, বলিতেছি না, তোমাদের কান্না আমি সহ্য করিতে পারি না?
সে বলিল, কাঁকালে জোর লাগিয়াছে। লাথিটা মোক্ষম স্থানে লাগিয়াছে। মনেও আঘাত পাইয়াছি যথেষ্ট। তাই কাঁদিতেছি। কেঁউ। কেন, আমার কি ব্যথা পাইলে কাঁদিবারও অধিকার নাই? কেঁউ।
রাগত স্বরে বলিলাম দেখ, বেশি অধিকার ফলাইতে যাইও না। অন্যত্র কুকুরেরা এত অধিকার পায় না।
সে বলিল, কেঁউ, মহাশয়, তাহারা খাইতে পায়। তাই কাঁদিতে হয় না। আমি ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদিয়া লগুড়াঘাত পাইয়াছি। তাহাতে কাঁদিলে কাঁকালে লাথি পাইয়াছি। আমি নিজের মনে কাঁদিতেছি। কেঁউ।
প্রচণ্ড রাগ হইল। বলিলাম,কে আছিস, দে তো জানোয়ারটার লেজে লঙ্কা পটকা বেঁধে আগুন লাগিয়ে।
কুকুর পলাইয়া বাঁচিল।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন