আদুরে আলাপ : পিনাকী চৌধুরী

আদুরে আলাপ : পিনাকী চৌধুরী  
আদুরে আলাপ : পিনাকী চৌধুরী  
 
আজ থেকে প্রায় বারো - তেরো বছর আগেকার কথা , কলকাতা তখন মজে আছে এফ. এম রেডিওতে ! আবাল বৃদ্ধ বণিতার তখন যেন ফ্যান্টাসির অপর নাম এফ এম রেডিও, পরম আদরেরও বটে ! শহরতলীর এক সদ্য কলেজ পাস আউট যুবক হামেশাই একটি এফ এম চ্যানেলের নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে ফোন করতো ! এখানে বলে রাখা ভাল যে, সেই সময় বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে এফ এম চ্যানেলগুলি অনুষ্ঠান করতো এবং শ্রোতাদের কাছে তারা মতামত জানতে চাইতো ! আর মাঝে মাঝে শ্রুতিমধুর গান পরিবেশন করতো । 
 
তো শহরতলীর সেই উঠতি বয়সের যুবকটি ফোন করে নিজের সুচিন্তিত মতামত পোষণ করতো ! যদিও যুবকটি যতটা না মতামত ব্যক্ত করতো, তার থেকেও ঢ়েড় বেশি সময় ব্যয় করতো এক সুমিষ্ট কন্ঠস্বরের মহিলা রেডিও জকির সাথে বাক্যালাপের জন্য ! ওদিকে তুখোড় পেশাদার ওই মহিলা রেডিও জকির এফ এম প্রচার তরঙ্গে নিবেদন ছিল বেশ অনন্যসাধারণ ! প্রায় প্রতিদিনই ওই রেডিও জকির অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়ে যুবকটি ফোন করতো । আর স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা পরিচিত কলারও যুবকটি হয়ে উঠলো ! একদিন সেই রেডিও জকি অন এয়ার বলেছেন " হাই, বন্ধুরা ! কেমন আছো তোমরা ? রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ ! আর তাই আজ তোমাদের কাছে জানতে চাই নতুন বাংলা বছরের কথা "! কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই যুবক ফোন করলো " আমি রাজপুর থেকে তমাল বলছি....."! 
 
 মহিলা রেডিও জকি " হাই তমাল, কেমন আছো ? আচ্ছা বলতে পারবে আগামীকাল নতুন কোন বাংলা সন শুরু হচ্ছে "? তমাল কোনোরকমে ঢোঁক গিলে বললো " পেটে আসছে, মুখে আসছে না "! রেডিও জকি তখন অন এয়ার স্মিত হেসে বললেন " আচ্ছা তমাল, নববর্ষের হালখাতার মানেটা কি "?  তমাল জবাব দেয় " পাড়ার মুদির দোকানে গিয়ে কুড়ি টাকা দিলেই আমাকে দোকানদার একটা মিষ্টির প্যাকেট আর ক্যালেন্ডার দিয়ে দেয় "! ফোনের ওপ্রান্তে তখন মহিলা রেডিও জকি খুব হাসতে থাকেন ! বলেন " আচ্ছা তমাল, নববর্ষে তোমার প্ল্যান কি "? তমাল আর থাকতে পারলো না , বললো " তোমার সাথে একটু দেখা করতে চাই "! মহিলা রেডিও জকি তখন খুব সংযতভাবে বললেন " ঠিক আছে তমাল , আগামীকাল নববর্ষে বিকাল ৫ টার সময় তুমি গড়িয়াহাটে আমাদের অফিসে এসো ! অবশ্যই দেখা হবে " এই বলে ফোনটা কেটে দিলেন ! ওদিকে তমাল যেন আনন্দে আত্মহারা ! 
 
মনে মনে ভাবলো, যার অতো সুন্দর কন্ঠস্বর, না জানি কতও সুন্দর দেখতে ! আর তার সঙ্গে তমালের এও বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হল যে, নিশ্চয়ই ওই মহিলা রেডিও জকি আমাকে ভালবাসে, ঠিক যেমনটি আমি তাকে ভালবাসি"!  চৈত্র সংক্রান্তির রাতে তমাল উত্তেজনায় সারা রাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারলোনা ! অবশেষে এলো সেই সন্ধিক্ষণ ! পয়লা বৈশাখের দিন বিকালে নির্দিষ্ট সময়ে তমাল হাজির হয়ে গেল ওই এফ এম চ্যানেলের অফিসে ! কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবার পর স্টুডিওর বাইরে এলেন সেই মহিলা রেডিও জকি ! তমালকে নিজের পরিচয় দিলেন ! কিন্তু একি ! তমাল মনে মনে ওই মহিলা রেডিও জকির যেমন চেহারা কল্পনা করেছিল, এতো ঠিক তার উল্টো ! মাজাঘষা গায়ের রঙ, চোখে হাই পাওয়ারের চশমা ! তমাল কিছুতেই যেন মেলাতে পারছিল না ! 
 
মহিলা রেডিও জকি এইবার ইষৎ রুঢ় ভাবে বললেন " শোনো তমাল, এটা কোন বাংলা সন শুরু হয়েছে আজ তাও তুমি জানো না! আর হালখাতা মানেটাও তুমি একদমই জানোনা ! অথচ তুমি প্রায় প্রতিদিনই ফোন করতে শুধুমাত্র আমার সাথে অন এয়ার কথা বলতে "! কিছুক্ষণ থেমে.... " শোনো তমাল, এটা আমাদের প্রফেশান ! আর প্রতিটি কলারের সাথেই আমাদের এই টোনে কথা বলতে হয় ! আর তোমার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে কোনও জ্ঞান নেই ! এমনকি কোনও সম্যক ধারণাও তোমার নেই ! আর অন এয়ার কথা বলাটা আমার পেশা ! তোমার সঙ্গে গল্প করবার স্থান নয় "! তমলের যেন তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা ! মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে সে বললো " হ্যাঁ, বুঝতে পারলাম ! আমি আজ তাহলে চলি "!......এই বলে তমাল দ্রুত পায়ে সেখান থেকে একরাশ হতাশা নিয়ে দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলো !

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.