![]() |
সুজন মন্ডল |
শ্রুতি,
এ চোখে আর ঘুম আসে না ;
জেগে জেগে তা যেন পাথরের ফুল!
এখন শুধু রাত্রির নিস্তব্ধতার সাথে সহবাস—
কিছুটা যৌণ উত্তেজনা!
তারপর.......
আবার মগজ জুড়ে কালো চিন্তার ঝিলিক ।
শ্রুতি,
বলেছিলে তুমি একদিন,
স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে—
বিশ্বাস কর আমি হেঁটেও ছিলাম!
কিন্তু, কিছুটা হাঁটার পর আর পারিনি :
দেখেছি বাবাকে গিলে খেয়েছে পুঁজির হিংস্র কল—
মা গিয়েছে পাশের বাড়িতে গতর খাটাতে—
বোন গিয়েছে নিষিদ্ধ পল্লীতে যৌবন ভাঙ্গাতে—
ভাই গিয়েছে দেশী মদের গন্ধে ভোটের বাক্সে—
এসব দেখে আমি পারিনি সামনে এগোতে ;
পিছিয়ে এসেছি অনবরত নর্দমার পাঁকের ভেতরে!
শ্রুতি,
বিশ্বাস কর আমি এখনও ছিঁড়ে ফেলিনি :
তোমার দেওয়া ভালোবাসার লাল গোলাপ গুলো—
হয়তো শুকিয়ে গেছে দারিদ্র্য সূর্যের আঁচে !
কিন্তু তার সুবাস—
এখনও বাতাসে রয়েছে আগেরই মতন ।
শ্রুতি,
তুমি হয়তো ভাবছ ;
আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি!
জন্ম দিয়েছি একের পর এক :
মিথ্যের—
লোভের—
দ্বেষের— সন্তান!
কিন্তু তোমার এই ভাবনা অসম্পূর্ণ—
আমি এখনও ভালোবাসি :
নীল আকাশের ওড়া ঐ পাখিদের—
সবুজে ঘেরা প্রতিটি শস্যক্ষেত—
এমনকি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে—
ভালোবাসি এখনও প্রতিবাদের সেই :
গান—
গল্প—
কবিতা—
মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি আমার অতীতের সাথীরা :
মিছিলে হাঁটছে—
স্লোগান দিচ্ছে—
জীবন বাজি রেখে লড়ছে—
সেই মুক্তির আলো জ্বালাতে ।
শ্রুতি,
আমিও তো চেয়েছিলাম ওদের সাথে :
পায়ে পায়ে হাঁটতে—
স্লোগানে গলা মেলাতে—
পারিনি, এটা আমার চরম ব্যর্থতা ।
কিন্তু, এই না পারার জন্যে :
আ-মি-ই দায়ী!
দায়ী তো এই সমাজ,
এই সমাজের কালো কালো মাথা গুলো,
যারা আমার পথে বিষের কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে!
পেছন থেকে টেনে ধরেছে,
ঠেলে দিয়েছে দারিদ্র্যের সমুদ্রে—
যেখানে শুধুই অন্ধকার আর মৃত্যু বসবাস ।
শ্রুতি,
আমাকে আবার টেনে তোলো
বীভৎস বর্তমানের অন্ধকূপের ভেতর থেকে :
বিপ্লবের আলোতে—
প্রতিরোধের আলোতে—
আন্দোলনের আলোতে—
এই ব্যর্থতার কলঙ্ক মুছে ফেলতে ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন