![]() |
লক্ষী কান্ত মণ্ডল |
কান্নার জন্য : একটি উপস্থাপনা
প্রচুর কষ্ট হচ্ছে কয়েক দিন। আর এরকম সময় এলেই আমি গান শুনতে থাকি । রাতে দিনে এমন কি হাঁটতে হাঁটতেও শুনি সব ধরনের গান। তবে রবীন্দ্রনাথই বেশি। রবীন্দ্রনাথই প্রতিটি পলকের জন্য বুঝে যান মন । প্রতিক্ষণেই তার উপস্থিতি । মনপ্রাণ সঁপে দেই তার গানে। তবুও কোথায় যেন অস্থিরতা । কোথায় যেন অপূর্ণতা । কে যে শরনার্থী , কে যে আশ্রয়দাতা । ব্যালট বাক্স কেড়ে নেওয়ার মতো দৃশ্য ছুটে যায় রাস্তায় । আর আমি সেই পথের ধারে নির্বাক দর্শক । সেই ভীড়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে প্রিয়জনদের । মাথাটা ঝিমঝিম করে , চোখের জ্বালা নিয়ে মনে হয় আমি এই পৃথিবীর কেউ নয় । তখনই বুঝতে পারি আমার আরও কিছু দিন টিকে থাকা দরকার । এই অস্তিত্ব ফুরিয়ে যাওয়ার নয় কিংবা ফুরিয়ে যেতে দিতে নেই ।
আমার এক ডাক্তার বন্ধুকে বলেছিলাম আমার কাউন্সেলিং দরকার। আমার দিকে না তাকিয়েই সে বলল - সকলেরই তা দরকার । সে কানে ফোন নিয়ে অন্য এক প্রেসক্রিপশনে ব্যস্ত রইল । কয়েক মিনিট পরে সে বলল - যেমন দ্যাখো , আমার দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে , অথচ পারছি না , আমারও কাউন্সেলিং দরকার , উত্তম সব সময় দাঁড়িয়ে আছে , বসতে চাইলেও বসতে পারছে না - তারও কাউন্সেলিং দরকার , তাপস এই পয়তাল্লিশ বছর বয়সে প্রেম করতে চাইছে , তারই চোখের সামনে দিয়ে বাইকে ওড়না বেঁধে চলে যাচ্ছে সেই মহিলারা - তারও কাউন্সেলিং দরকার । এবার বলো তোমার কি সমস্যা ? কাউন্সেলিং দরকার এটা মনে হচ্ছে কেন ? তুমি কিছু বুঝতে পারছ কি ?
আমি চুপচাপ বসে থাকলাম তার পাশের চেয়ারে। দেয়াল থেকে একটা টিকটিকি আমার ঘাড়ে পড়ল । চমকে ওঠলাম । ও একটা মশা ধরতে চাইছে । আর মশাটা হুল ফুটিয়ে বসে আছে আমার ঘাড়েই । ঝেড়ে দিলাম সব - মশা এবং টিকটিকি । এসব দেখে ডাক্তার বলল - বল কিসের জন্য কাউন্সেলিং , সমস্যাটা ঠিক কোথায় ? আমি বাই ফোকাল চসমাটা খুলে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বললাম - কাঁদতে পারছি না । আমায় কাঁদিয়ে দাও।
চেয়ারে বসে পড়ল ডাক্তার । একটা চারমিনার স্পেশাল ধরিয়ে টান মারল কয়েকটা । আমাকে কাউন্টার অফার করে বলল - আমিও কাঁদতে চাই , কিন্তু কোনো মতেই পারছি না ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন