বিশেষ রচনা, ‘‘ঝড়’’, লিখেছেন, তৃণা মুখার্জী

বিশেষ রচনা, ‘‘ঝড়’’, লিখেছেন,  তৃণা মুখার্জী
 

ঝড়

 
তৃণা মুখার্জী


প্রবল ঝড়ে এলোমেলো পাতার মতো উড়ে গেল একটা সংসার। পিনু ও তার মা-বাবা তিনজনে থাকে। ছোট্ট সংসার যেমন-তেমন করে কেটে যায়। বাবা সাইকেল সাড়া এর দোকানে কাজ করে। মার খুব ইচ্ছা, পিনু যেন অনেক বড় মানুষ হয়। কিন্তু গরিবের ছেলের বড় মানুষ হওয়াটা‌ হয়তো শক্ত সেকথা ভাবে। গরীব রিক্সাওয়ালার ছেলেকে মাধ্যমিকে প্রথম হতে দেখে ইচ্ছাটা পূরণ হতে পারে, এই আশা জাগে মনে। মা ছাড়া ‌পিনু অন্ধ। সেই ছোট থেকেই ঘুমের ঘোরে মা মা বলে চিৎকার করে ওঠে। এটা একটা রোগ বলা যায়। কারোর বাড়ি গেলে পিনুর পাশে কেউ শোয়না। মাধ্যমিক দিয়েছে পিনু। স্বপ্ন দেখে ডাক্তার হবে। এখনকার যা পরিস্থিতি, তাতে ডাক্তার হওয়াটাই যেন সবচেয়ে মহৎ কাজ কিন্তু এ-ত স্বপ্ন পূরণের আগেই ঘটল দুর্যোগ। চারদিকে সতর্কতা জারি করা হল। দোকান থেকে ফিরতে পারলো না পিনুর বাবা। মাও কাজে গিয়ে আটকে পড়েছে। কি হবে ভাবতে ভাবতেই ওদের মাটির বাড়ির পাশে একটা লাইনের খুঁটি পড়ে গেল। চারদিক অন্ধকার, শুধু ঝড়ের শো শো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। গাছগুলো মচ মচ করছে। ভয় পাওয়া পিনু এই সবকিছু অনুভব করতে লাগলো। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না, মা বলে ডেকেও সাড়া পেল না। তারপর আর কিছু মনে নেই ।
....................…......................
এই ঝড়ে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছে। কত মানুষ তাদের কাছের মানুষের খোঁজ পাচ্ছে না। এমন দিশেহারা অবস্থায় সরকার থেকে ক্যাম্প  খোলা হয়েছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য। ক্যাম্পে প্রচুর মানুষের ভিড়। ঝড় যে বয়ে গেছে তা ভালোই বোঝা যাচ্ছে‌। কদিনের ঝড় ও আর্তনাদের পর আজকের রাতটা যেন অনেক নিস্তেজ। সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ ক্যাম্পের নিস্তব্ধতায় শোনা গেল মা মা ডাক । ভিড়ের মধ্যেও একজন চিনতে পারল এই‌ ডাককে। এত হারানোর মাঝেও ডাকটা যেন সব পাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করল।

Share on Google Plus

About Shraboni Parbat

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.